এ কে এম শিহাব অনূদিত গ্রেগরী পেট্রোভিচ ম্যাক্সিমফ প্রণীত এনার্কো-সিন্ডিক্যালিজম পুস্তকের ধারাবাহিক- ১

এ কে এম শিহাব অনূদিত গ্রেগরী পেট্রোভিচ ম্যাক্সিমফ প্রণীত এনার্কো-সিন্ডিক্যালিজম পুস্তকের ধারাবাহিক- ১

লেখক গ্রেগরী পেট্রোভিচ ম্যাক্সিমফ  প্রসঙ্গেঃ

গ্রেগরী পেট্রোভিচ ম্যাক্সিমফ ১৮৯৩ সালের ১০ ই নভেম্বর রাশিয়ার নিভৃত পল্লীর মিটোশিনো প্রদেশের স্মলনেস্ক গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন । তিনি প্রথম জীবনে ধর্মীয় বিদ্যায় পারদর্শী হয়ে প্রিস্ট হিসাবে স্বীকৃতি অর্জন করেন। তিনি অল্প দিনের মধ্যেই বুঝতে পারেন যে, এই পথ তার জন্য নয় তাই তিনি গীর্জা ছেড়ে সেন্ট পিটাসবোর্গে চলে আসেন। তিনি সেখানে ১৯১৫ সালে একজন কৃষি বিশারদ হিসাবে গভীর জ্ঞান অর্জন করে। তিনি তার ছাত্র জীবনেই বিপ্লবী হিসাবে নাম লিখান । তিনি ১৯১৭ সালের রাশিয়া বিপ্লবের একজন প্রথম সারির প্রচারক ও বিপ্লবী ছিলেন । পরে তিনি লাল ফৌজে  ভর্তি হন । সেই সময়ে বলশেভিকগন এই ফৌজদের মাধ্যমে শ্রমিক শ্রেনীকে নিরস্ত্র করার জন্য অভিযান পরিচালনা করছিলেন । তিনি সেই কাজের বিরুধিতা করার অপরাধে মৃত্যু দন্ডে দন্ডিত হন। তবে তার প্রতি ইস্পাত শ্রমিকদের সংহতি ঘোষনা তাকে বাচিয়ে দেয় । তিনি এনার্কো-সিন্ডিক্যালিস্ট পত্রিকা গোলস ট্রাডা (ভয়েস অফ লেবার) এবং নভি গলোস ট্রাডা (নিউ ভয়েস অফ লেবার) সম্পাদনা করেন। ৪ ই মার্চ, ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে তিনি ক্রোনস্টেড বিদ্রোহের সময় গ্রেপ্তার হন । তিনি ম্যাগনিতে টেগানাকা জেলখানায় অন্যান্য কমরেডদের সাথে আটক হন। চার মাস পর তিনি প্রায় তের দিনের জন্য অনশন ধর্মঘটে যান এবং ইউরোপীয় সিন্ডিক্যালিস্টদের হস্তক্ষেপের ফলে তিনি দশদিন পর অনশন ভঙ্গ করেন, পরে তিনি রেড ট্রেড ইউনিয়ন ইন্টারন্যাশনালের একটি কংগ্রেসে যোগদান করেন, তার প্রচেস্টার ফলে তার কমরেডদের বিদেশে নির্বাসিত হওয়ার সম্ভাবনা নিশ্চিত করে।

তিনি বার্লিন গিয়েছিলেন, যেখানে তিনি রবোটী রাখ (শ্রমজীবন) সম্পাদনা করেন, যা নির্বাসনে রাশিয়ান সিনডিক্যালদের একটি কাগজ। তিন বছর পর তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্যারিস যান, যেখানে তিনি শিকাগোতে বসতি স্থাপন করেন। সেখানে তিনি ১৬ মার্চ, ১৯৫০ তারিখে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত গলস ট্রুজেনসিকা (ওয়ার্কার্স ভয়েস) এবং পরে ডেইলো ট্রুডো-প্রুভঝেনি (শ্রমজীবন - জাগরণ) সম্পাদনা করেন।

ম্যাক্সিমোফ তার জীবনের পূর্নতার আগেই হ্রদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরন করেন। তার মৃত্যুতে চারি পাশে শোকের ছায়া নেমে আসে। তিনি কেবল একজন সৃজনশীল চিন্তক ছিলেন না, তিনি অত্যন্ত দৃঢ় চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। তিনি অনেক বড় মাপের মানবিকতার অধিকারী ছিলেন । তিনি একজন সামগ্রীক চিন্তার অধিকারী লোক ছিলেন । তার চিন্তায় হতাশার আধার কাটিয়ে আলোর জ্বলক ফোটানোর প্রায় ছিলো খুব স্পষ্ট । তিনি নিজেকে একজন এনার্কিস্ট হিসাবে এই জন্য গড়ে তুলেন নাই যে এটা তার উপর কোন দায়িত্ব, বা বাহির থেকে কেউ তা চাপিয়ে দিয়েছে তার উপর। এই চেতনা তার হ্রদয়ের চেতনা ছিলো। যা তার কর্ম  ও চিন্তাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে ছিলো । যা দ্বারা তিনি সারাজীবন চালিত হয়েছেন ।

  • রুডলফ রকার

ভূমিকাঃ এনার্কিজমের আলোকে আধুনিক সমাজ

প্রচলিত সমাজ হল পুঁজিবাদী সমাজ। এই সমাজের ভিত্তি হলো ব্যাক্তিগত সম্পত্তি। এই সমাজের প্রধান চরিত্র হলো উৎপাদন করা হবে বানিজ্যের জন্য, মুনাফার জন্য । উৎপাদন সম্পর্ক ও গড়ে উঠে এরই উপর ভিত্তিকরে, সকল পন্য বিতরন করা হয় বা মালিকানা গ্রহন করা হয় ব্যাপক সংখ্যায় শ্রমিকের মজুরী সহ স্বল্প সংখ্যক লোকের জন্য – পুঁজিবাদী শ্রেনীর স্বার্থে। বিপুল পরিমান মানুষ কেবল শ্রম শক্তির বাহন হয়ে থাকে- শারিরিক ও মানসিক বা মেধাগত শ্রম পুঁজিবাদীদের নিকট বিক্রি করে দেয়া হয় ;  শুধু তাই নয় প্রলেতারিয়েত, দরিদ্র কৃষক, মধ্যবিত্ত, ক্ষুদ্র শিল্পের উৎপাদন যা নিজেরা উৎপাদন করেন, তারা সকলেই পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ্য ভাবে পুঁজিবাদের নিকট বন্দ্বী। পুঁজির নিকট দায়বদ্ব হয়ে আছেন ।

আধুনিক সমাজের এই পদ্ধতির কারণে, অবিচ্ছিন্ন সম্পদ এক প্রান্তে সঞ্চিত হয়, অন্যদিকে ভয়াবহ দারিদ্র্য রয়েছে। উন্নত পুঁজিবাদের দেশগুলিতে এই বিষয়টি বিশেষভাবে স্পষ্ট হয়, যেখানে সমাজের শ্রেণিবিভাগটি অত্যন্ত স্পষ্ট ও তাত্পর্যপূর্ণ। “ কেহ কেহ বলেন,  সত্যিকার ভাবে বেশী সম্পত্তির মালিক ও কম সম্পত্তির মালিকদের মধ্যে ভেদ রেখা টেনে দেয়া সত্যি কঠিন কাজ । যেহেতু এই সমাজ গুলো একে অপরের সাথে নানা ভাবে পারস্পরিক ভাবে সম্পর্কিত হয়ে আছে ।  তাদের মধ্যে স্পস্ট ভাবে তেমন কোন ভেদ রেখা দৃশ্যমান নয়। যদিও প্রানী জগত ও বৃক্ষ জগতের মাঝে একটি স্পস্ট ভেদ রেখা আছে, হিংস্র প্রানী জগত ও মানুষের মাঝে খুব সহজেই পার্থক্য নিরূপন করা যায় ।

মানব সমাজে সাম্য নির্ভর করে পরিস্থিতির উপর, যদি ও অনেক ক্ষেত্রে অনেক তথ্য উপাত্ত মজুদ নেই, তবে এটা বলা যায় যে, সামাজিক পরিবর্তন ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির বদল হলে অজান্তেই অনেক কিছু পাল্টে যায়। সামাজিক শ্রেনী বিভক্তি অনেকটা স্পস্ট । প্রায় সকলেই বলতে পারেন সমাজে কারা উচ্চ বিত্ত, মধ্য বিত্ত  আর কারা নিম্ন বিত্ত  বা প্রলেতারিয়েত।  এটা দিবালোকের মতই স্পষ্ট যে কে কে অনেক জমির মালিক, কাদের নিয়ন্ত্রনে অনেক বেশী মজুর আছে । যারা কৃষি শ্রমিক হিসাবে গ্রামীন পরিবেশে কাজ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করেন” ( এম এ বাকুনিন)। আধুনিক সমাজে রাষ্ট্র তার সকল শক্তি দিয়ে যেমন তার লোকদের চালনা করে তেমনি গ্রামীন সমাজে ধর্ম ভিত্তিক নৈতিকতার আবরনে তাদেরকে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রন করা হয় ।

পুঁজিবাদী সমাজের সকল কিছুই নির্ভর করে পন্য কেনা বেচার উপর- বাজারের বৈশিস্ট হলো এটা বিতরনের মাধ্যম যে সকল পন্য ব্যবহার উপযোগী করা হব, তা এই প্রক্রিয়ায় বিতরন করা হবে । আর সেই কারনেই একটি পুঁজিবাদী সমাজে সকল কিছুই পন্য হিসাবে পরিগনিত হয়ে থাকে । ( তা কেবল বস্তুগত জিনিষ নয়, বিজ্ঞান, শিল্প, এমন কি নৈতিক গুণাবলী ও বিক্রয়  যোগ্য।) ফলে, উৎপাদন  অংশ ক্ষুধা দারিদ্র আর মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য হয়। কেননা সেই মানুষ গুলো ও পণ্যে পরিণত হয়ে  পড়েন । সেই সমাজের মধ্যে মানুষের ইচ্ছা, আকাঙ্ক্ষা, চিন্তা ভাবনা, শারীরিক প্রয়োজোন সকল কিছুই পন্য হিসাবে গন্য হয় ।

পুঁজিবাদী ধনিক শ্রেনী ও তাদের সম্পদের সুরক্ষা দেয় রাষ্ট্র; ফলে প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় শ্রমিক শ্রেনী যখন কাজের জন্য মালিক পক্ষের সাথে কোন চুক্তিতে আবদ্ব হয় তখন রাষ্ট্র শ্রমিক নয় মালিক পক্ষের স্বার্থে কাজ করে থাকে। সামাজিক এই নীতিমালায় সাধারন ধরে নেয়া হয় সাম্য ও ন্যায্যতা বজায় রাখা হবে, কিন্ত বাস্তবতা হলো সকল সময়েই  সুবিধাবাদি শ্রেনীর পক্ষে সকল কিছু হয়ে থাকে। এমন কি শ্রমিক বা প্রলেতারিয়েতগন প্রতিবাদ করলে তাদের বিরুদ্বে রাষ্ট্র শক্তি প্রয়োগ করে থাকে । প্রচলিত ব্যবস্থায় দূর্বলদের জন্য কোন জায়গা নেই, এখানে শক্তিমানদেরই পুজা করা হয় । এই প্রচলিত পরিস্থিতিতে পুঁজিবাদী শ্রেনী বেশ কিছু সুবিধা আদায় করে নেবার সুযোগ পায়, রাস্ট্রীয় সুবিধার পাশা পাশি শ্রমিকদের শ্রমে উৎপাদিত পন্যের সিংহ ভাগ মালিক পক্ষ তাদের পকেটস্থ করে নেয়। পুঁজিবাদী ব্যবস্থার ভেতর শ্রমিক শ্রেনী মধ্যস্থতা করার পরিধি ও সীমিত। প্রায়স রাষ্ট্র মালিকদের পক্ষ নিয়ে শ্রমিকদেরকে নির্মম ভাবে দমন করার কাজ খুবই বিশ্বস্থতার সাথে করে থাকে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এখন পর্যন্ত যে উন্নয়ন হয়েছে তা সামগ্রীক ভাবে মালিক পক্ষ ব্যবহার করতে চায় না, বরং খুবই সীমিত  আকারে উচু স্তরে বিশেষ করে শোষক শ্রেনীর লোকেরা এই সকল প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকে । আজো মেহেনতী মানুষ প্রযুক্তির সুফল ভোগ করার সুযোগ পায় নাই । যাদের শ্রমে ঘামে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যাপক বিকাশ হয়েছে তার সুফল চুড়ান্ত বিশ্লেষণে পুঁজিবাদী শ্রেনীর ঘরে চলে যাচ্ছে । বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যে ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন হচ্ছে তা কাজে লাগাতে পারলে উৎপাদন ব্যবস্থাকে আরও সহজতর করা সম্ভব হবে । প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়লে উৎপাদন ব্যবস্থায় বড় বড় শিল্পের বিকাশ হবে । ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্প গুলো নিজেদের পুঁজি সহ নানা কারনে সংকুচিত হয়ে পড়বে। এরা বড় শিল্পের উপর নির্ভরশীল হয়ে পরবে । ফলে শ্রমিক সংখ্যা বৃদ্বি পাবে ।

অধিকন্তু, ক্রমবর্ধমান হারে যান্ত্রিকিকরনের ফলে পন্য উতপাদনের হারে দ্রুত বৃদ্বি পায়, ফলে উদ্যোক্তাদের মাঝে শ্রমিকদের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেয়। তখন রাস্ট্রীয় ক্ষমতার চত্রছায়ায় মালিক পক্ষ অপেক্ষাকৃত দূর্বল জনশক্তি যেমন- নারী ও শিশুদেরকে কাজে লাগিয়ে দেয়। সেই কারনে ক্রমবর্ধমান যান্ত্রিকিকরনের ফলে বেকারত্ব বেড়ে যায়, পুঁজিবাদীরা ভাড়াটে শ্রমিক কাজে লাগায়, মজুরী কমিয়ে দেয় আর সমাজে বাড়ায় তিব্র শোষণ ও  দারিদ্রতা।

আধুনিক সময়ে যান্ত্রিকতার যে বিকাশ হয়েছে তাতে মানুষ নিজের শক্তি ও সময় ব্যবহার করতে পারছে, অর্থনীতিতে সঞ্চার করতে পারছে বিপুল অগ্রগতি, উৎপাদন করতে পারছেন বিপুল পরিমানে পন্য সামগ্রী যা মানুষের চাহিদা মাটানোর জন্য সরবরাহ করা হচ্ছে নানা ভাবে । কিন্তু এখনো পুঁজিবাদ সকলের চাহিদা মেটাতে পারছে না । এখোনো অগনিত মানুষ শিল্প পন্যের নাগালের বাইরে রয়ে গেছেন। তা ছাড়া পুঁজিবাদের নিজস্ব দূর্বলতার কারনেই সকল মানুষের সমান ভাবে চাহিদা মেটানো সম্ভব নয় । এমন কি মানুষের নিত্য প্রয়জনীয় পন্য যেমন খাদ্য, কাপড়, গৃহ এবং শিক্ষার মত জিনিষ ও সকলকে দেয়া পুঁজিবাদের পক্ষে অসম্ভব । প্রচুর মানুষ আছেন যারা তাদের পছন্দ সই কাজ খোজে পাচ্ছেন না, বেকারত্ব, অর্ধ বেকারত্ব মানুষের পেছনে লেগেই আছে ।

প্রচলিত ব্যবস্থায় পুঁজিবাদী দেশ সমূহে মানুষের অগনিত মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে যাচ্ছে । ফলে উৎপাদিত পন্য ধ্বংস করা ও এক সমস্যা হিসাবে দেখা দিয়েছে । দেশের ভেতরে স্তুপিকৃত পন্য ধবংস করতে না  পেরে আন্তর্জাতিক বাজারে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। অথচ এমন অনেক পন্য আছে যা অনেক দেশের জন্যই উপযোগী নয় । ফলে অর্থনীতিতে দেখা দেয় সংকট, মন্দ্বা, ও দেওলিয়াত্ব ইত্যাদি। অনেক উদ্যোক্তার কর্ম ক্ষেত্র বিনাশ হয়ে যায় । নিচে নেমে যায় কর্মজীবী  মানুষের জীবন যাত্রার মান ।

উতপাদনে বিশৃঙ্খলা এবং বাজারে দেখা দেয় সীমাহীন প্রতিযোগীতা ফলে বড় পুঁজির অধিকারী সংস্থা গুলো একচাটিয়া ভাবে সুবিধা আদায় করে নেয় – তারা তখন নিজেদের মধ্যে গড়ে তোলে সিন্ডিক্যাট, কার্টেলস ও ট্রাষ্ট । যা আমরা বিংশ শতাব্দীতে অনেক উদাহরন দেখেছি । যারা অর্থনীতি ও রাজনীতিক জীবনে ব্যাপক প্রভাব বলয় তৈরী করে শিল্পোন্নত দেশ সমূহে ব্যাপক সুবিধা আদায় করে নিয়েছে। সেই পথ ধরেই পুঁজিবাদী দেশ সমূহ নিজেদের শিল্পের বিকাশ ও পুঁজির পরিমান ব্যাপক ভাবে বাড়িয়ে নিয়েছে। এই পরিস্থিতির কারনে বিবর্তনের ইতিহাসে নয়া অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে – পুঁজিবাদের অধ্যায় বিকশিত হয়েছে এবং যাকে আমরা পুঁজিবাদের চূড়ান্ত উন্নয়ন মনে করি ।

পুঁজিবাদ বর্তমান দুনিয়ায় এখন একটি সাম্রাজ্যবাদি স্তরে উন্নিত হয়েছে এবং এটার  অর্থনৈতিক অবস্থাটি এখন একটি কম্যান্ডে পরিনত হয়েছে । পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় আর নতুন কিছু দেবার নেই এখন এর বিদায় নেবার সময় হয়েছে । এটা এখন যতদিন ঠিকে থাকবে তা মানুষকে কস্ট ছাড়া আর কিছুই দিতে পারবে না । সুনির্দিস্ট ভাবে বললে  বলতে হয়, সাম্রাজ্যবাদ এখন দুনিয়ার সকল জায়গা থেকে সকল সম্পদ নিজের দেশে পুঞ্জীভূত করার জন্য যা যা করনীয় তার সবই করবে ।  যুদ্ব, খুন ও গুম সব । দুনিয়ায় তাদের কথাই চলবে। অন্যদের কথা কেবলই কথার কথা ছাড়া আর কিছুই নয় । তা কেবল অর্থনৈতিক বিষয়ে নতুন রাজনৈতিক এমন কি সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ও তাদের ইচ্ছাই শেষ কথা । সকল জাতি সকল দেশ তাদের কথা বাহিরে যাবার কোন সাধ্য নেই ।

অন্যান্য দেশে  ব্যাপক ভিত্তিক বিনিয়োগ করার পেছনে সাম্রাজ্যবাদি দেশ গুলোর নজর থাকে সংশ্লিষ্ট দেশ সমূহের প্রাকৃতিক সম্পদ ও মানব শ্রম শোষণ করার দিকে । তারা সত্যিকার ভাবেই “পিতৃভূমির” ধারনাটিকে কুসংস্কার হিসাবেই বিবেচনা করে থাকে। তাদের নিকট মুনাফাই হলো আসল কথা । নিজেরা জাতীয়তাবাদের কথা বললে ও আদতে এরা শোষক হিসাব আন্তর্জাতিক ধ্যান ধারনার  উপাসক ।

পুঁজি কখনো “পিতৃভূমি” চিনে না । আমরা দেখতে পাচ্ছি বড় বড় ট্রাষ্ট সমূহ রাস্ট্রীয় আইনের আওতায় আবদ্ব। সকল সংস্থার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আসলে অভিন্ন। তাদের লক্ষ্য দুনিয়ার উপর প্রভূত্ব কায়েম করা । তাদের মধ্যে ও সেই জন্য পারস্পরিক প্রতিযগীতা বিদ্যমান আছে । আর সেই জন্যই পুঁজিবাদী সমিতি সমূহ বাজারের দখল নেবার জন্য মরিয়া হয়ে প্রচেস্টায় লিপ্ত রয়েছে । বিভিন্ন দেশের এই মরিয়া চেস্টার ফল হিসাবে কোন কোন সময় আমরা “সশস্ত্র শান্তি”র মহড়া দেখতে পাই, তবে প্রায়স তা যুদ্বে রূপ নেয় । ১৯১৪-১৯১৮ সালে এই রকমের একটি লড়াই আমরা দেখেছি । সাম্রাজ্যবাদি যুদ্ব দুনিয়াকে অসাম্য করে তোলে, বিজয়ী ও বিজেতা হিসাবে যেমন বিভক্তি রেখা টেনে দেয় তেমনি প্রলেতারিয়েত ও দরিদ্র কৃষকদের জন্য জীবন দুর্বিসহ করে তোলে । সাম্রাজ্যবাদ হলো সকল যুদ্বের উৎস। এটা স্পষ্ট করেই বলে দেয়া যায় যে, যতদিন পুঁজিবাদ থাকবে ততদিন যুদ্ব ও দুনিয়াময় বিরাজমান থাকবে ।

সাম্রাজ্যবাদের বিকাশ মানেই হলো বেকারত্বকে স্থায়ীত্ব প্রদান করা, এটা মানুষের বিশ্বাস নিয়ে খেলা করে, ধর্মকে কাজে লাগায় রাষ্ট্র, আইন ব্যবহার করে মানুষকে বিকশিত হতে বাঁধা প্রদান করে । এটা প্রলেতারিয়েতের আন্দোলন সংগ্রামকে কঠিন করে দেয় এমনকি তাকে দমনে নানা প্রকার ব্যবস্থা গ্রহন করে থাকে । যদি ও সমাজের কিছু অংশে শ্রেনী চেতনা বৃদ্বি পায়, শোষণ সম্পর্কে মানুষ সচেতন হয়, প্রতিবাদ প্রতিরোধের দাবী তিব্রতর হয় । তবে এটা ও স্পস্ট হয় যে প্রচলিত সংগঠন সমূহের বদলে নয়া সংস্থা গড়ে তুলা ছাড়া  এই পরিস্থিতির বদল করা সম্ভব নয় ।

ইতিহাসের মহান উদ্যোগ যা রাশিয়ার সমাজ ব্যবস্থাকে পাল্টে দিয়েছিলো ১৯১৭- ১৯২১ সালে মধ্য ইউরূপের কয়েকটি দেশকে প্রচন্ড ঝাকুনি ও দিয়েছিলো, সেই ঝাকুনির পেছনে ও পুঁজিবাদী এবং সাম্রাজ্যবাদী যুদ্বই ছিলো প্রধান নিয়ামক । রাশিয়া ও জার্মানীর বিপ্লবের জন্য কোন ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত বিবচনায় ছিলো না; কিন্তু রাশিয়ার বিপ্লবটি রাস্ট্রবাদি সমাজবাদের খপ্পরে পড়ে যায়। ফলে রাস্ট্রীয় সমাজবাদ আর পুঁজিবাদী সমাজের মধ্যে কোন পার্থক্য দেখা যায়নি। যেখানে উভয়ই রহস্য জনক পদ্বতী অনুসরন করে সকল সমস্যার সমাধানের প্রায়স চালায়; তারা চেষ্টা করেন ক্ষমতা ও সংহতি, সমতা ও শোষণ, প্রগতি ও দারিদ্রতার মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে । যা আদতে অসম্ভব ব্যাপার । কেননা এই গুলো পরস্পরের সম্পূর্ন বিপরীত বিষয়। এই গুলো কোন গুনগত বা পরিমান গত উপাদান নয় যা একে অন্যকে প্রভাবিত করতে পারে।  রাশিয়ান বিপ্লবে প্রচলিত রাস্ট্রীয় ও সামাজিক সমস্যার সমাধানের জন্য কঠোর ও কট্টর সাম্যবাদি পন্থা অনুসরন করা হয়েছিলো। আসল বিষয় হলো সাম্যবাদ কৃতৃত্ববাদি ভাবধারা দিয়ে বাস্তবায়ন করা যায় না । তা করা হলে সামাজিক ভাবে নানা ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি করবেই । তার জন্য দরকার সামাজিক শক্তির বিকাশের সাথে সাথে সকলের স্বেচ্ছাকৃত অংশগ্রহন নিশ্চিত করা ।  যা ছিল রাসিয়ান বিপ্লবে একেবাই অনুপস্থিত।

রাশিয়ায় ক্ষমতা ভিত্তিক সাম্যবাদের চর্চা আমাদেরকে অনেক কিছু শিখিয়েছে, আমরা পদ্বতীর বাস্তবসম্মত জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছি । রাষ্ট্র ভিত্তিক সাম্যবাদি চর্চায় পন্যের উৎপাদন ও বিতরন প্রক্রিয়ায় আমলতন্ত্র এক অন্দ্ব ভুতের মত জনগণের উপর চেপে বসে । সেই প্রাশাসনিক ব্যবস্থায় সকল প্রকার উৎপাদন যন্ত্র, সরবরাহ করার পন্য, সকল শ্রমিকের শ্রম, এবং একজন ব্যাক্তি নিজে ও রাস্ট্রের মালিকানায় চলে যায়, যা প্রকারান্তরে স্বল্প সংখ্যক মানুষের ক্রিড়নকে পরিনত হয়। সমাজের সকল স্তরের মানুষ যারা শ্রম দিয়ে নানা প্রকার পন্য উৎপাদন করেন তারা সেই ব্যবস্থায় শুধুই রাস্ট্রের ক্ষমতা বৃদ্বির কাজ করে থাকে। ফলে যারা প্রশাসনে থাকে তাদের ও ক্ষমতা বাড়তে থাকে । যা অনেক ক্ষেত্রে আবার জনগণকেই নানা ভাবে নিপিড়নের শিকার হতে হয় ।

আমলাতন্ত্রের জাল শিল্প সম্পর্ককে  এবং অর্থনৈতিক জীবন ও সমাজকে ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত করে, এরা সকল প্রকার জনশক্তিকে রাস্ট্রের জন্য কাজ করতে বাধ্য করে থাকে,  জনগনকে নানা বিভক্ত করে, সামাজিক স্তরবিন্যাস তৈরী করে, জনগণকে অফিসিয়াল নিয়ন্ত্রনে চালিত করে আমলাতন্ত্রের প্রভাব বলয়  বজায় রাখে। জনগনের ব্যাক্তিগত পরিচয়ের বিপরীতে তাদেরকে “জনশক্তি” নামে অবহিত করে থাকে।  রাষ্ট্র যেমন পরিকল্পনা করে সে তার ইচ্ছেমত জনশক্তিকে ব্যবহার করে থাকে। সেই ক্ষেত্রে সাধারন মানুষের আশা আকাংখার চেয়ে রাস্ট্রীয় আমলাদের স্বার্থই প্রাধান্য পেয়ে থাকে । এই প্রক্রিয়া যদি কোন সাম্যবাদি সমাজে ও অনুসরন করা হয় তবে মানুষ এক প্রানহীন রোবটে পরিনত হয় । মানুষ রাস্ট্রের দৃষ্টি ভঙ্গীর বাইরে কিছু ভাবতেই পারে না । ফলে ব্যাক্তি হিসাবে মানুষের সৃজনশীলতার মৃত্যু ঘটে। সামাজিক স্তর বিন্যাস আরও শক্তিশালী হয়। নিশ্চিত ও নিরাপদ হয় আমলাদের রাজত্ব।

নাগরিক সমাজের জীবন একটি পুলিশ রাস্ট্রের সত্যিকার অর্থে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় এগিয়ে যেতে পারে না। ক্ষমতার কেন্দ্রীকতার কারনে একটি সাম্যবাদি রাস্ট্রে ও সাধারন মানুষ রসকষ হীন ভাবে জীবন যাপন করতে বাধ্য হয়। মানুষকে পদে পদে পর্যবেক্ষনের শিকার হতে হয় । এই পদ্বতী মানুষের স্বাধীনতাকে কবর দিয়ে দেয়। সমাবেশ করা, মুক্তভাবে কথা বলা, সংবাদ আদান প্রদান করা, শিল্প সংগ্রাম জোরদার করা, ও ব্যাক্তি হিসাবে নিজের উন্নয়ন সাধন কোন ভাবেই সম্ভব হয় না । এই সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়া মানুষের ব্যাক্তিগত সম্পর্ককে পর্যন্ত বিনষ্ট করে ফেলে । নাগরিক জীবন হয়ে উঠে দুর্বিসহ।

এই ধরনের সামাজিক বিবর্তন পুঁজিবাদের অধীনে আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারনে অধিকতর তিব্রতর হবে, শ্রেনী সংগ্রাম হবে আগের যেকোন সময়ের তুলনায় নির্মম ও নিস্টুর প্রকৃতির। রাশিয়ার সমাজ ব্যবস্থায় আমরা যে অবস্থা প্রত্যক্ষ করেছি, তাতে বুঝা যাচ্ছে সামাজিক এই কাঠামোতে প্রচুর অসামঞ্জস্য বিদ্যমান ছিলো। এই সমাজ কাঠামোটি পরিগঠনের পেছনে স্বাধীন সাম্যবাদের বদলে  কৃতৃত্ববাদি সাম্যবাদ অনুসরন করা হয়েছিলো । এই বিষয়টি স্পষ্ট হয় যখন আমরা পুঁজিবাদী পুলিশি ব্যবস্থার রীতিনীতি গুলো অধ্যয়ন করি। বলশেভিক চক্র নিজের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য বিকল্প পথ হিসাবে রাস্ট্রবাদি ধারনার অনুসরন ও অনুকরন কঠোর ভাবে করতে থাকে ।

রাশিয়ার বিপ্লব শুরু হয়েছিলো ধনিক শ্রেনীর সমাজকে চুরমার করে দিয়ে একটি স্বাধীন ও মুক্ত সমাজ গড়ে তুলার জন্য, কিন্তু একটি অভিজাত চক্র একনায়কতান্ত্রিকতার আমদানি করে বসে, তারা ফিরে যায় “ ওয়ার কমিউনিজম” এর পথে। যা আদতে পুজিবাদেরই নামান্তর । তবে, এই বিপ্লব  ফ্র্যান্স বিপ্লবের মত একটি মহান ধারনা দুনিয়ার সামনে মানুষের হাজির করেছে, মানুষকে প্রেরনা দিয়েছে পুরাতন ধ্যান ধারনা থেকে বেড়িয়ে আসার জন্য। এই বিপ্লবের আসল লক্ষ্য ছিলো দুনিয়ার সকল দেশের, জাতির ও বর্নের  শ্রমিকদেরকে আন্দোলন সংগ্রামে প্রেরনা সৃষ্টি করে দিতে ।

কেবল মাত্র এনার্কো-সিন্ডিক্যালিস্ট বিপ্লব ই  প্রলেতারিয়েত এবং সমগ্র মানব সমাজকে সত্যিকার স্বাধীকারের দিকে নিয়ে যেতে পারে, সাম্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ সৃজন করতে পারে সামাজিক জীবনে । এই মতবাদই কেবল মানুষকে নিরাপদ করতে পারে সকল যুদ্ব, সন্ত্রাস থেকে, এমন কি যে সকল রাষ্ট্র সাম্যবাদের নামে শাসনের নামে নানা ভাবে মানুষকে নিপিড়ন করছে। রাশিয়ার সাম্যবাদের দেউলিয়াত্ব, জার্মানীর সামাজিক গণতন্ত্রের প্রহেলিকা, ও পুঁজিবাদের সামাজিক  দ্বান্দ্বিকতা এবং প্রচলিত সমাজে শ্রমজীবী মানুষের লড়াই সংগ্রামের একটি সুস্টু সুরাহা করতে পারে এনার্কো-সিন্ডিক্যালিজম।

কেবল মাত্র সামাজিক বিপ্লবই ব্যাক্তিগত সম্পত্তির বিনাশ করতে পারে, আর চিরতরে বিলিন করতে পারে এর ভিত্তি রাষ্ট্র যন্ত্রকে। প্রতিস্টা করতে পারে সামাজিক মালিকানা, রাস্ট্রবিহীন ফেডারেশন ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা। যার মৌল কাঠামোটি তৈরী হবে স্বাধীন ও মুক্ত চুক্তির মাধ্যমে কারখানা ও গ্রামীন উন্নয়ন শাখা প্রশাখার। এটাই নিশ্চিত করে দিবে সামগ্রীক স্বাধীনতার। তা সামজের মানুষের ব্যাক্তিগত স্বাধীকার, উন্নয়ন, এবং মানব সমাজের উপর থেকে বিতারিত করবে সকল প্রকার প্রভূত্বের । সেই সমাজে কোন ভাবেই মানুষের উপর মানুষ প্রভূত্ব করতে পারবে না ।

রাশিয়ার অভিজ্ঞতা আমাদেরকে শিক্ষা দেয় যে, সাম্প্রদায়িক সামাজিক চক্র দূর করতে হলে অবশ্যই এনার্কিস্ট সাম্যবাদ অনুসরন করতে হবে। রাস্ট্রবাদি পুঁজিবাদের বিতারনের জন্য সামগ্রীক ভাবে এনার্কিস্ট সাম্যবাদ চর্চা করতে হবে। এটা কেবল প্রলেতারিয়েত শ্রেনীকে প্রতিবিপ্লব প্রতিরোধে সহযোগিতা করবে না, বরং সমাজের পরগাছে ও পরজীবীদেরকে সমূলে বিনাশ করতে সাহায্য করবে। এছাড়া সামাজিক পর্যায়ে নানা বিরোধ নিষ্পত্তি করার জন্য “প্রলেতারিয়েতের একানায়কত্ব” কায়েমের ও দরকার হবে না ।

এই পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে কিছু অবস্থার মুখোমুখী হতে  হয়, সেই প্রসঙ্গে লিটাকুনিন বলেছেন, “ জমির মালিকানা পাবে তারাই যারা নিজেদের হাতে জমিতে ফসল ফলান, যাকে বলা হয় কৃষি যৌথ খামার। পুঁজি ও কারখানার মালিকানা চলে যাবে শ্রমিকদের নিকট । যাকে বলা হয় শ্রমিক ইউনিয়ন”। একেই সময়ে, “ সকল রাজনৈতিক দল মুক্ত স্বাধীন ফেডারেশনের আওতায় চলে আসবে, এই গুলো কৃষি ও শিল্পের আওতায় নিজেদের জায়গা করে নিবে”। যাকে বলা হয়, রাজনৈতিক সামাজিকি করন, বা মুক্ত গ্রামে মুক্ত ফেডারেশন; অর্থনীতিতে প্রতিস্টিত হবে সিন্ডিক্যালিজম । সাম্যবাদি সংগঠনের মাধ্যমে স্বাধীন মুক্ত কারখানায় স্থাপিত হবে । এই প্রক্রিয়ায় সকল গ্রাম ও কারখানা  সকলেই একত্রিত হবে এবং উৎপাদনে তৎপর হবে। জনগণের চাহিদার আলোকে উৎপাদন অব্যাহত রাখবে ।

“ গ্রাম ও কারখানা” বাকুনিন প্রস্তাব করেছেন, “ সব কিছু নিচের দিক থেকে পুনঃ গঠনন করা হবে, প্রথমেই কিছু নতুন ভাবে স্থাপন বা গঠন করা হবে না – প্রতিটি সংস্থা ও প্রতিস্টানকে যথাযথ ভাবে সংস্কার ও পুনঃগঠন করা হবে । তবে, প্রতিটি সংস্থাই হবে প্রানবন্ত। সেই গুলো এখন যেমন আছে তার ছেয়ে শত গুন ভালো সেবা প্রাদন ও উৎপাদনে ভূমিকা রাখতে পারবে । সেই নয়া সংগঠন গুলো নিজেদের সাধ্যমত প্রচারনায় অংশ গ্রহন করবে। তাদের উপর কোন রাষ্ট্রীয় খবরদারী থাকবে না। তারা নিজেদের মত করে প্রচারনা চালাতে পারবে, নিজেদের বিকাশ সাধনে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারবে। যতক্ষন পর্যন্ত নিজেদেরকে একটি দক্ষতাগত উন্নত স্তরে পৌঁছাতে না পারবে  ততক্ষন পর্যন্ত ব্যবস্থাপনাগত প্রশিক্ষন অব্যাহত থাকবে”।

শ্রমিক শ্রেনীর লকেরা স্বাধীকার অর্জনের মহান লক্ষ্য ও দুনিয়াকে হেফাজত করার জন্য কাজ করবে। আন্তর্জাতিক এনার্কো-সিন্ডিক্যালিজমের কাজই হলো বিপ্লবের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা।  মানব জাতির ইতিহাসে সৃষ্ট সমস্যার সমাধানে - ইতিহাসের অনিবার্য দাবী পুরনের জন্য এনার্কো-সিন্ডিক্যালিজম সক্রিয় ভাবে কাজ করে যাবে। প্রলেতারিয়েতের মুক্তি নিশ্চিত করবে। শ্রেনী সংগ্রামের ফলাফল সকল মানুষের জন্য নিবেদন করবে এনার্কো-সিন্ডিক্যালিজম । আজ সেই মহান কাজটি সময়ের দাবী হয়ে উঠেছে। অত্র পুস্তকে এনার্কো-সিন্ডিক্যালিজমের বিপ্লবের অন্তর্বতী কালিন সময়ে করনীয় সহ নানা দিক তোলে ধারার প্রায়স থাকবে।


Share Tweet Send
0 Comments
Loading...
You've successfully subscribed to Bangladesh ASF
Great! Next, complete checkout for full access to Bangladesh ASF
Welcome back! You've successfully signed in
Success! Your account is fully activated, you now have access to all content.